ঢাকা , শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫ , ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের উদ্বেগ গ্রহণ করলেও দায়ী নয় বলছে অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নোয়াবের উদ্বেগ বড় বড় অনুষ্ঠানে নারীদের যথাযথ জায়গা দেওয়া হয় না-প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে-আলী রীয়াজ বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রত্যাশা তারেক রহমানের আন্দোলন ঠেকিয়েও সমালোচিত সরকার শ্রম আইন সংশোধনসহ পোশাক শ্রমিক সংহতির ১১ দাবি তুহিনকে এভাবে হত্যা করবে এটা ভাবতেও পারছি না-নিহত সাংবাদিকের বাবা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৯০ জন নির্বাচনই সংস্কার সম্পন্ন করার শান্তিপূর্ণ পথ-সাকি প্রাথমিক শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১১তম গ্রেড, বেতন বাড়বে কর্মকর্তাদেরও ন্যায্য ও বাসযোগ্য শহর গড়তে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে-ডিএনসিসি প্রশাসক ভোটার হওয়ার জন্য অর্ধলক্ষ প্রবাসীর আবেদন শক্তিশালী জোট গঠনে তৎপর জামায়াত হানিট্র্যাপের ঘটনা ভিডিও করাই কাল হয়েছে সাংবাদিক তুহিনের শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিচার চলতি বছরেই যশোরে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আ’লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে দাঙ্গা প্রয়োজনÑ গয়েশ্বর গাজীপুরে ট্রাভেল ব্যাগ থেকে অজ্ঞাত যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রির আড়ালে মাদক ব্যবসা গ্রেফতার ১

শক্তিশালী জোট গঠনে তৎপর জামায়াত

  • আপলোড সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ০২:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ০২:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন
শক্তিশালী জোট গঠনে তৎপর জামায়াত
* সভা-সেমিনার সমাবেশে শক্তি প্রদর্শনে জমজমাট রাজনীতির মাঠ
* মানুষ সামনে বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়: গাজী আতাউর রহমান
* ইসলামিক দলগুলোর একটা জোট হতে পারে: অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিপরীতে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একটা ‘সমঝোতায়’ যাওয়ার তৎপরতা চলছে। সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়া এবং ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের পাশাপাশি আরও কিছু দল সক্রিয় রয়েছে। তবে এই ‘সমঝোতা’ উদ্যোগকে এখনই জোট বলতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট দলগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নানা কৌশলে বিএনপিবিরোধী শক্তিশালী জোট গঠনে তৎপর জামায়াতে ইসলামী। ধর্মভিত্তিক দল ছাড়াও এই জোটের শরিক হতে পারে মধ্যপন্থিরা। গুঞ্জন আছে এনসিপিকে জোটে ভেড়ানোরও। তবে জামায়াতের সভা-সমাবেশে যোগ দেয়াকে নির্বাচনী নয়, বরং সংস্কারেকন্দ্রিক জোট বলছে তরুণদের দলটি। প্রত্যাশিত জোট হলে নির্বাচনে ভালো ফলাফলের আশা জামায়াতের। আর বিএনপির অভিযোগ, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ নানা দাবি তুলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তবে জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র আর বিচার নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার মধ্যেও দেশের রাজনীতিতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চলছে রাজনৈতিক মিত্র বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। সভা-সেমিনার আর সমাবেশে শক্তি প্রদর্শনে জমজমাট রাজনীতির মাঠ।
সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না, এটা ধরে নিয়েই ইসলামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চাচ্ছে। সংবিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার প্রশ্নেও এসব দলের অধিকাংশের অবস্থান কাছাকাছি। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশসহ অনেকগুলো দল সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। এর মধ্যে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু কিছু দল উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমাতে প্রস্তাবিত সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাবে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি বদলাতেও তারা একমত। জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কতটা যুক্ত হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। দলটির সঙ্গে সংস্কার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে একধরনের মতৈক্য আছে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের সঙ্গে। তবে বিএনপি এখনই নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার ইঙ্গিত না দিলেও সমমনা দল ও জোটগুলোকে আস্থায় রেখেছে। মিত্র অনেক দলের নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় বিএনপিকে চিঠিও দিয়েছে দলটি। অন্যদিকে জামায়াত অনেকটা আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামী দল এবং বেশকিছু মধ্যপন্থি দল নিয়ে জোটের চেষ্টায় দলটি। এরইমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশে বিএনপিকে দেখা না গেলেও এনসিপি, গণঅধিকারসহ ইসলামী দলগুলোর সরব উপস্থিতির দেখা মিলেছে। রাজনীতির মাঠে চাউর হয়েছে, এসব দল মিলে হতে যাচ্ছে বিএনপিবিরোধী নির্বাচনী জোট। তবে এটিকে নির্বাচনী জোট নয়, বরং সংস্কারকেন্দ্রিক জোট বলছে এনসিপি। তবে এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, মানুষ সামনে বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সে জন্য একটি সম্মিলিত জোটের চিন্তা করা হচ্ছে। সেই চিন্তা থেকে সবাই কাছাকাছি আসছে। তিনি বলেন, আমরা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। নির্বাচনে ভালো ফলের জন্য সবাই চেষ্টা করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সে জন্য সর্বোচ্চ কৌশল আমাদের নিতে হবে।
জানা গেছে, এসব দলের মধ্যে কওমি ঘরানার পাঁচটি দল সমঝোতা জোটের আলোচনার জন্য সম্প্রতি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে। ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার লক্ষ্যে প্রথম প্রচেষ্টা শুরু করেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। গত এপ্রিলে তাঁর এই উদ্যোগে যুক্ত হয় আরও চারটি নিবন্ধিত ইসলামি দল। সে দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস। এই পাঁচটি দল ২৩ এপ্রিল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানায়। এর আগে বরিশালে চরমোনাই পীরের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর আমিরও ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনার উদ্যোগে একমত হয়েছিলেন। এরপর জামায়াতের সঙ্গেও ইসলামী আন্দোলনের একাধিকবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক বা আলোচনা হয়েছে। এটি চলমান রয়েছে। আমরা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। নির্বাচনে ভালো ফলের জন্য সবাই চেষ্টা করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। সে জন্য সর্বোচ্চ কৌশল আমাদের নিতে হবে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন ও সংস্কার ঘিরে বিএনপির বিপরীতে যেসব বক্তব্য বা তৎপরতা, তার কেন্দ্রে রয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূতিতে ১ জুলাই বিএনপির অনুষ্ঠানে জামায়াত অংশ নিলেও ইসলামী আন্দোলন যায়নি। বিএনপির ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বক্তব্য দেন। খুব সংক্ষেপ ও নিরুত্তাপ বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এর আগে গত ২০ জুন খুলনায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একধরনের সমঝোতা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর একটি ভোটবাক্স থাকবে। তিনি বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। নীতিগতভাবে সবার মধ্যে একটা থিংকিং (চিন্তা) আছে। তবে এখনো নির্বাচনী জোট নয়, পারস্পরিক আলোচনা চলছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, প্রার্থী বাছাই, প্রার্থীদের কার মাঠে কী অবস্থান, সেটি যাচাই করে জোটের ঘোষণা হতে পারে। বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগ অনুপস্থিত থাকায় বিএনপিকে এখন সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ছোট দলগুলোর গুরুত্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কাও আছে ছোট দলগুলোর মধ্যে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, এটা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। ইসলামী ও দেশপ্রমিক দলগুলো, যারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে ধারণ করে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং ফ্যাসিবাদ যাতে ফিরে না আসতে পারে তার পক্ষে, যারা সমঝোতার চিন্তার পক্ষে একমত, তাদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের চিন্তা চলছে। যারা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে, কালো যুগ ফিরে আসুক, এমনটি চায় না, তারা এই জোট গঠনের চিন্তা করছে।
এ বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হবে কি হবে না সেটার এখনও মেরুকরণ হয়নি। তবে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির বাইরে অধিকাংশ দল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি এক প্যারালালে চলে আসছে। ইসলামী দল ও সমমনাদের নিয়ে শক্তিশালী জোটের ব্যাপারে আশাবাদী জামায়াত। প্রত্যাশিত জোট হলে ভালো ফলাফলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দলটি। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচন করব। তবে এককভাবে জামায়াতে ইসলামী সমমনা দলগুলো নিয়ে সিট সমঝোতার মাধ্যমে এই নির্বাচন করবে। জামায়াত অবশ্যই এবার জনগণের আস্থা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে
বিএনপিকে বাইরে রেখে এসব দলের সভা সমাবেশের দাবি দাওয়ার সমালোচনা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার মতে, পিআরের মতো নানা দাবি তুলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এ ধরনের সরকার এসে কোনো দিন উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেনি। তারা জাতীয় নির্বাচন করেছে। এই পিআর করে উনারা পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনরুত্থান করতে চাচ্ছে। তবে এখনই চূড়ান্ত জোটের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ইসলামিক দলগুলোর একটা জোট হতে পারে। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হতে পারে, নাও হতে পারে। কারণ সময় তো এখনও আছে। ক্রমাগত এই ট্রায়ালের মধ্য দিয়েই দেশের রাজনীতি যাবে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্তও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ