তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
রাজধানীর অন্যতম প্রধান ক্রাইম জোন ও আতঙ্কের নাম হলো তুরাগ। পেশাদার ছিনতাই, দাগি আসামি, ডাকাত, সন্ত্রাস, ভাড়াটিয়া কিলার, খুনি, উঠতি বয়সী ক্যাডার ও বিভিন্ন অপরাধজগতের সাথে জড়িত বিচক্ষণ মানুষের নিরাপদ বসবাসের নগরীতে পরিণত হয়েছে তুরাগ থানা এলাকাটি।
সূত্র জানায়, অপরাধীদের গোপন আস্তানায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায়। এক সময় এই থানা এলাকাটি সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন ছিল। ছোট বড় প্রায় ৩৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত জনবহুল তুরাগের হরিরামপুর ইউনিয়ন। কি নেই এখানে, হাত বাড়াইলেই সহজে মিলে মরণনেশা মাদক। মাদকে দিনদিন সয়লাব হয়ে গেছে পুরো তুরাগ ও উত্তরাসহ আশপাশের এলাকাগুলো। বিশেষ করে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট তুরাগের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এতে করে যুব সমাজ ও নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী মেধাবীরা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সমাজে দিনদিন মাদকাসক্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর কোন প্রতিকার নেই, বরং উল্টো এর বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন ভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না ভয়াবহ মাদকের বিস্তার।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, তুরাগের তেত্রিশ গ্রামে কমপক্ষে ২শ’টি স্পটে শতাধিক ডিলার ইয়াবা ব্যবসার সাথে ওঁতপ্রত ভাবে জড়িত। একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা পৃথক পৃথক এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। সমাজের এক শ্রেণির মুখোশধারী গডফাদার তথা বড় ভাইয়েরা এদেরকে শেল্টার তথা আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে থাকে। অনেক সময় উঠতি বয়সী যুবক, তরুণদের বিভিন্ন সময় দলীয় মিটিং মিছিলসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। আর মাদকের বড় মাপের কারবারিরা দামি গাড়িতে বডিগার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এদের মধ্যে অনেকে আছে অল্প শিক্ষিত, কেউবা আছে, পড়াশোনা একেবারেই জানে না।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, উত্তরা ১২, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর সেক্টর এলাকা গুলো ইয়াবা সিন্ডিকেটের গোপন ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই স্থানীয় বাসিন্দার ও পথচারীরা রাত কিংবা দিনের বেলায় মাদকাসক্ত, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও উঠতি বয়সী অপরাধীদের কবলে পড়ে নগদ টাকা ও মোবাইল সর্বত্র খুঁইয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে স্থানীয় কোন ব্যক্তি কিংবা কেউ যদি প্রতিবাদ করেন, সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে মাদকদ্রব্য বিক্রির কথা জানায়, কিংবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাহলে তাকে বলির পাঠা হতে হয়। অনেকট সময় তাকে প্রকাশ্যে হতে হয় নাজেহাল, নানা ধরনের অহেতুক হয়রানির শিকার কিংবা তার জীবনে চলে আসে হুমকি।
সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউন, তুরাগ ও টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকা থেকে দামী গাড়ি, জীপ গাড়ি, পাজারো, দামী মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনে করে মাদকের ডিলাররা রাতে কিংবা দিনের বেলায় সুযোগ বুঝে খুঁচরা ব্যবসায়ীদের হাতে সুযোগ বুঝে মরণনেশা ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২শ’ স্পটে দেড় থেকে ২০০ জন ইয়াবা ডিলার বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইয়াবা সিন্ডিকেট চক্রের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাঙ্গপাঙ্গরাও জড়িত। বাকীরা ইয়ারা ব্যবসার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এবং সেবনকারী।
ডিএমপির তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে গোপন তথ্যের ভিওিতে তুরাগের ধউর এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে এস,আই মামুনুর রশিদ ও এস,আই শহিদের অভিযান চালিয়ে ৩১২ বোতল ফেন্সিডিল সহ মো. নাগর হোসেন (৩২) ও মো. শিমুল (২১) নামে দুই জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের বাজার মূল আনুমানিক প্রায় ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন নগর সেনেরহুদা গ্রামে আটককৃতদের বাড়ি।
অপরদিকে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, গত শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে উত্তরা পশ্চিম থানার ১২নং সেক্টর ৩ নং সড়কের ৩৬ নং বাড়ির স্বপ্ন সুপার শপের রাস্তার উপর চেকপোস্ট করাকালীন সময় একটি নীল রঙের টয়োটা প্রভোক্স গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনা (৪২) নামে এক মাদক কারবারি কে ৮ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকার সহ আটক করা হয়।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্সনীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। নতুন প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে বাঁচাতে হলে এখন থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার, সেবন ও বিক্রি বন্ধ করতে পরিবারের সবাইকে ঐক্যবদ্ব ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। মাদকের বিরুদ্বে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।
ঢাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় ১৫/২০ হাজার মাদকাসক্ত চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরা অধিকাংশই মাদকসেবী। মাদকে আসক্ত তরুণ-তরুণীদের অধিকাংশ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ইতোমধ্যেই দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০/৩২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলেও ধারণা করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
এব্যাপারে অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ডিজি, ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারসহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসি ও সচেতন মহল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
