
তিন মাসেও স্বাস্থ্য খাতে সুপারিশ বাস্তবায়ন নেই
- আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৪:২৯:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০৪:২৯:০৭ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে নীতিনির্ধারণ ও জনস্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ কণ্ঠগুলো একত্রিত হয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও গত তিন মাসে তা বাস্তবায়নে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখা যায়নি। গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে এক নীতি সংলাপের আয়োজন করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) , ইউএইচসি ফোরাম এবং ইউনিসেফ। এতে জনস্বাস্থ্য, নীতিগত গবেষণা, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। আলোচনায় মতামত দেন— ড. আমিনুল হাসান, ড. ফিদা মেহরান, অধ্যাপক এম.এ. ফয়েজ, ড. সৈয়দ লিয়াকত আলী, ড. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ, ড. জাকির হোসেন, ড. সৈয়দ রুবায়েত, ড. আবুল কালাম আজাদ, ড. মোশতাক হোসেন, সাংবাদিক শিশির মোরল, ড. মোহিবুল্লাহ, শায়লা পুরভিন, ড. সাইহা মারজিয়া, ড. ইমরান আহমেদ চৌধুরী, আবদুল হাকিম মজুমদার এবং শাদাব মাহমুদ। তারা সম্মিলিতভাবে দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য প্রশাসনের চিত্র, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ধীরগতির বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হন— সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও গত তিন মাসে তা বাস্তবায়নে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বর্তমানে যেসব কার্যক্রম চলছে, তা মূলত খাতের টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোযোগী। কিন্তু কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়গুলো এখনও উপেক্ষিত। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান আলোচনা পর্বের সূচনা বক্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতির অনুপস্থিতি আবারও অতীতের মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিপরামর্শ উপেক্ষিত হয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের যে গতি তৈরি হয়েছে, তা যেন হারিয়ে না যায়। বাস্তবভিত্তিক অগ্রাধিকারগুলো যেন দ্রুত চিহ্নিত ও বাস্তবায়িত হয়। তার আহ্বানটি ছিল স্পষ্ট— সংস্কার কেবল কল্পনা নয়, এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। আলোচনায় অনেকেই জোর দিয়ে বলেন, একটি সুস্পষ্ট ট্রানজিশন প্ল্যান, একটি সময়সীমাবদ্ধ ও ক্ষমতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন জরুরি— যা আইনি, আর্থিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এই টাস্কফোর্স হবে দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতার মাঝে সংযোগের সেতুবন্ধন। আলোচনায় আরও উঠে আসে কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ—প্রতিষ্ঠানগত দায়িত্বে দ্বৈততা, জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি, জাতীয় স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলের অনুপস্থিতি, এবং স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বাজেট বরাদ্দের ঘাটতি। সমতাভিত্তিক সেবা প্রদান, প্রজনন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা প্রদানকারীদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য-সচেতনতা বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে বক্তারা মত দেন। প্রকৃত সংস্কার কেবল কারিগরি দক্ষতার বিষয় নয়—এটি শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রতিশ্রুতিরও দাবি রাখে। রাজনৈতিক মালিকানা ও যথাযথ বাজেট বরাদ্দ ছাড়া, ভালো পরিকল্পনাগুলোও থমকে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা একটি নাগরিক সমাজভিত্তিক সংস্কার প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষার ওপরও জোর দেন— যাতে করে সংস্কার প্রক্রিয়ার গতি অব্যাহত রাখা যায় এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। সমাপনী বক্তব্যে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জাতীয় রূপান্তরের ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে উদ্ভাবিত জুলাই চার্টারে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারকে সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দুটি সমান্তরাল পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান— একদিকে অগ্রাধিকার খাতে কার্যকর পদক্ষেপ, অপরদিকে বৃহত্তর জনসচেতনতা এবং রাজনৈতিক সমর্থন তৈরির জন্য জোরালো অ্যাডভোকেসি। আলোচনার শেষভাগে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় যে, পর্যালোচনার সময়সীমা দ্রুত শেষ হচ্ছে এবং গুণগত, সমতাভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক স্বাস্থ্যখাতের জন্য একটি সমন্বিত, বহু-পক্ষীয় প্রয়াস এখন অত্যাবশ্যক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ