
ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা মোহনায় ড্রেজিং, চরমুক্তারপুরে ভাঙন
- আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০১:৩৬:০৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ০১:৩৬:০৯ অপরাহ্ন


মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা মোহনায় ড্রেজিংয়ের কারণে সদর উপজেলার চরমুক্তারপুর এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের এলাকা। এরই মধ্যে প্রায় এক একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটি বলছে নদীর কৃত্রিমভাবে ভরাটকৃত স্থান অপসারণে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ভাঙ্গনে কারণে নিরাপদ দূরত্বে ড্রেজিংয়ের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল আহ্বানকৃত টেন্ডারে ৪১ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ ঘনফুট মাটি-বালি উত্তোলনের জন্য এক কোটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ৯০ দিনের মধ্যে এই বালু অপসারণে২৯ জুন থেকে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। মাটি অপসারণের সময় তীরভুমিতে অবস্থিত কোন স্থাপনা বা জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না” এবং “পার্শ্ববর্তী মিল-কারখানায় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না শর্ত দেয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না বলে তীরের লোকজন ও কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। এমনকি রাতেও ড্রেজিং চলে। চরমুক্তারপুরের শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ম্যানেজার আশরাফুল হক বলেন, অন্যায়ভাবে নদীর তীর কেটে নিচ্ছে তারা। কোনো নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। রাতেও বন্ধ থাকছে না বালু উত্তোলন।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, নদীর কৃত্রিমভাবে ভরাটকৃত স্থান অপসারণে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে শর্ত ভঙ্গ এবং ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ইজারাদারকে সর্তক করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ে আশপাশের গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙ্গনের মুখে। অপরিকল্পিত ড্রেজিং ও বেপরোয়া বালু উত্তোলনের নির্মম শিকার তারা। উন্নয়নের নামে চলছে লুটপাট, প্রকাশ্য বালু ডাকাতি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতা এবং ইজারাদারদের লাগামহীন কার্যক্রমে ক্ষতির মুখে পড়েছে তাদের জমি, ঘরবাড়ি, কলকারখানা ও পরিবেশ।
সূত্র বলছে, অনুমোদিত ১০টি ড্রেজারের পরিবর্তে সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে ৪০ টিরও বেশি অবৈধ ড্রেজার। যার একটিও বিআইডব্লিউটিএ অনুমোদিত নয়। মাত্র তিন মাসে ৪১.৮২ লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও এক মাসেই উত্তোলন করা হয়েছে তার কয়েকগুণ বেশি। যার ফলে নদীভাঙন, ফসলি জমি ধ্বংস, কলকারখানার গুঁড়িয়ে যাওয়া ভবন, কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয়, সব মিলে পুরো জনপদ আজ আতঙ্ক আর ক্ষোভে বিপর্যস্ত। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা ছিল, বালু উত্তোলনের সময় স্থানীয় জনগণের জমি, বসতবাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে, এসব শর্ত যেন শুধুই কাগুজে। ফসলি জমির পর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কলকারখানার স্থাপনাও টিকতে পারেনি এই কৌশলী লুণ্ঠনের মুখে। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে অনেকের, আহতও হয়েছেন অনেক। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসবাসের জায়গাও থাকবে না। তারা অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ একদিকে অনুমোদন দিয়েছে, অন্যদিকে ইজারাদারদের নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে এই বেআইনি ড্রেজিং বন্ধ করে দায়ী ইজারাদারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। না হলে এই অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ