রাঙামাটি থেকে মো. রেজুয়ান খান
আদিকাল থেকে যারা পাহাড়ের পরিবেশ বুঝে বসবাস করছেন, তারা পাহাড় ধসে শঙ্কিত নন- এই মন্তব্য করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পরিবেশ সচেতনতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পাহাড়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে যাদের গভীর জ্ঞান রয়েছে, তাদের বসবাসের ধরন এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের বাড়িঘরে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। বিপরীতে, যারা পাহাড়ের প্রকৃতি না বুঝে বসবাস শুরু করেন, তারাই এসব দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
গত শনিবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ আয়োজনে শহরের জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে সাত দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। “পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, বৃক্ষ আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। অথচ আজ আমরা নিজেদের স্বার্থে নির্বিচারে গাছ কাটছি, যার ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে, মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময় পরিবর্তিত হচ্ছে, ঝড়-বন্যার প্রকোপ বাড়ছে- এসবই গাছপালা ধ্বংসের পরিণতি বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, শুধু এলোমেলোভাবে গাছ লাগালেই হবে না। কোথায়, কখন, কী ধরনের গাছ লাগানো উচিত- এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে বনায়ন ও হর্টিকালচার করতে হবে। পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে দেশ আর্থিক ও পরিবেশগতভাবে লাভবান হবে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা তার বক্তব্যে আরও বলেন, প্রকৃতি ও অর্থনৈতিকভাবে কোন কোন গাছ লাভজনক, তা নির্ধারণে একটি সার্ভে করা প্রয়োজন। কোনো গাছের বিকল্প নির্ধারণ না করে তার চারা রোপণ পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ সেগুন গাছ রোপণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে হয়তো কেউ জুমচাষ বন্ধের দাবিও তুলতে পারে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, শুধু আম, কাঁঠাল নয় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কোন কোন গাছ লাগানো উচিত, তা নিয়ে গবেষণা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
“পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, পরিকল্পিত বনায়নের মাধ্যমে প্রাণীদের আবাস তৈরি হয়। সঠিক গাছ সঠিক স্থানে লাগালে মাটির ক্ষয় কমে, দূষণ হ্রাস পায়। হর্টিকালচার শুধু কৃষির একটি শাখা নয়, এটি একটি শিল্প, যা আমাদের পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, রাঙামাটি অঞ্চল ও বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের রাঙামাটি সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম এবং সিভিল সার্জন নুয়েন খীসা।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন।
পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেলা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা ছড়িয়ে দেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
