* ভারতের ইন্ধনে আড়ালে চলছে বিভিন্ন পরিকল্পনা * বর্তমানে চলছে লোকোমোটিভ অচলাবস্থা * মালামাল সংকটে বন্ধ রয়েছে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ * রেলওয়েকে বেসরকারি খাতে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা
ভারতের ইন্ধনে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ধ্বংসের গভীর চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আর ভারতের চক্রান্ত ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছেন বর্তমান রেলওয়ের ডিজি আফজাল হোসেন। এর পরিপেক্ষিতে একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে এক অস্বাভাবিক অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে রেলকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লোকোমোটিভ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে বহু ইঞ্জিন বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এই অচলাবস্থার পেছনে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রেলওয়ের স্টোর এবং মেকানিক্যাল বিভাগকে দুর্বল করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। ওয়ার্কশপগুলো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের জন্য স্টোর বিভাগে চাহিদাপত্র পাঠালেও তা অনুমোদনের পর্যায়ে নানা প্রশ্ন ও অজুহাতে আটকে যাচ্ছে। এসব ফাইল যখন তার কাছে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়, তখন তিনি তা ফেরত পাঠিয়ে দেন সিসিএস-এ তথাকথিত ‘কোয়ারি’র নামে। ফলে মালামাল সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ থেমে যাচ্ছে এবং যাত্রীসেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
গত ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ‘রেল নিউজ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন ছড়ানো হয়, যেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ডিজি মো. আফজাল হোসেনকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। অথচ তিনি একজন সজ্জন, ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা। এই প্রতিবেদনটি শুধু মানহানিকরই নয়, রেলওয়ের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করতেই করা হয়েছে। রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশব্যাপী যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ চলছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন প্রচারণা সেই প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করার নিন্দনীয় চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। ডিজি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসনের মতো রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষা না করায় জিডি আজ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, চীনের কর্মকর্তারা সে সময় বাংলাদেশের রেলমন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত বৈঠক করতে থাকেন। উদ্দেশ্য প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিমি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চালু করা। সমস্ত নথিও রেডি, সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ, নকশা চূড়ান্ত করাও শেষের পথে বাকি শুধু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার একটা মূল্যবান সাইন। কিন্তু বিধিবাম সেখানেই হাসিনার কাছে একের পর এক ফোন আসতে থাকে দিল্লি থেকে। দাদাবাবুরা যে নারাজ বাংলাদেশে ৩০০ কিমি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চালুর ব্যাপারে। বাঙালিদের কপাল পুড়িয়ে হাসিনা সেদিন ভারতের কৃতদাসীর মতো আর সাইন করলেন না সেই ফাইলে। এর সাথে সাথে বুলেট ট্রেনের যুগে প্রবেশ করাও হলো না বাংলাদেশের। প্রকল্পের সেই ফাইল রেল ভবনেই পড়ে রইলো নীরবে নিভৃতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে দেশকে যেভাবে চালিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশ কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয় বরং ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো প্রদেশ। আর হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন বরং মোদি সরকারের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তবে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এই মাস্টারমাইন্ডের নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি হাত দেন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আটকে থাকা সব প্রকল্পে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকায় এলো চীনের কর্মকর্তারা, হলো বৈঠক হলো সকল প্রস্তুতিও এবার শুধু এগিয়ে যাবার পালা, আর বিশ্বকে দেখানোর সময় আমরাও বুলেট ট্রেনে চেপে পা রেখেছি একুশ শতকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুতগতির ট্রেন চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে তা বিরাট প্রভাব ফেলবে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিমিষেই যেতে পারবে চট্টগ্রামে আবার কাজ সেরে দিনেই চলে আসতে পারবে রাজধানীতে এতে বাড়বে কাজের গতিও। যেখানে বর্তমানে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা সেখানে তখন লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট। একসাথে এই বুলেট ট্রেন পরিবহন করতে পারবে ৫০০ জন যাত্রী। দ্রুত গতির এই রেলসেবা চালু হলে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানও। কারণ এই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হবে ৬টি স্টেশন। এগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম। প্রতিটি স্টেশনের আশপাশে গড়ে উঠবে শিল্প এলাকা আসবে বিদেশি বিনিয়োগও। এভাবেই লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বুলেট ট্রেনের এই পকল্প ঘিরে। এবার আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেই, তবে তাদের লোকজন ঠিকই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ডিজি মো. আফজাল হোসেনের মাস্টারপ্লানের কাছেই হার মানবে ভারতের সকল ষড়যন্ত্র। আর বুলেট ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশও দেখিয়ে দেবে এটা কোনো চাওয়ালার দেশ নয় বরং নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নতুন বাংলাদেশ।
রেলওয়ের বিশ্লেষক আতিকুর রহমান বলছেন, এ যেন এক পরিকল্পিত ব্যর্থতা। স্টোর এবং ওয়ার্কশপকে অকার্যকর দেখিয়ে লোকোমোটিভ ও বগি মেরামতের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সদ্য পতিত এক ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার দুর্নীতিগ্রস্ত বেসরকারিকরণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ডিজির বিরুদ্ধে চলছে নানা বানোয়াট প্রচারণা
রেলওয়ে ধ্বংসের চক্রান্ত
- আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ১২:২০:০৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৫ ১২:২০:০৭ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ