গাজায় নেই খাবার, আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে ত্রাণ, সেটাও পড়ে থাকছে রক্তে ভেজা রাস্তায়। পাঁচ দেশের ৯০টি বিমান সহায়তাও উপত্যকাটিতে খাদ্য সংকট রুখতে ব্যর্থ। এয়ারড্রপ পদ্ধতিকে অকার্যকর, বিপজ্জনক এবং অপমানজনক বলে আখ্যা দিচ্ছে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, গত শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, মিশর, ফ্রান্স ও জার্মানি বিমান থেকে গাজায় ত্রাণের প্যাকেট ফেলেছে। যদিও হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষের চাহিদার তুলনায় কম। আল জাজিরা বলছে, খাদ্য সহায়তার মধ্যেও গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বর্বরতায় একদিনে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন, যার মধ্যে ৩৫ জনই ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহত হয়েছেন। এদিকে নেটজারিম করিডোরে খাদ্যের খোঁজে বেরিয়ে গুলিতে ঝরে পড়েছে কিশোর আহমাদের প্রাণ। ময়দা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় সে। মুহর্তেই ময়দার সাদা বস্তা আহমাদের তরতাজা রক্তে লাল হয়ে যায়। এক মাস আগেই আরেক সন্তান হারানো আহমাদের মা মানাল মাসউদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে তার ছেলের মরদেহ দেখতে আসার আহ্বান জানান। আহমাদের মা বলেন, ট্রাম্প চায় আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠাই। কিসের ধন্যবাদ? তিনি আসুক, আমার ছোট্ট ছেলেটাকে দেখে যাক। গিয়ে দেখুক, যেখানে আটা ছড়ানো সেখানেই রক্তে ভেসে আছে শহীদদের দেহ। এক মাস আগে আমার আরেকটা ছেলে মারা গেছে, আজ আহমাদও মারা গেল। খাবার আর পানি আনতে গিয়েছিল। আর রক্তে ভেজা লাশ হয়ে ফিরল। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। সংস্থাটি আরও জানায়, ফ্রান্স, জার্মানি, জর্ডান, মিশর আর আমিরাত মিলে ৯০টি এয়ারড্রপ চালালেও কার্যকর সহায়তা মেলেনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের অভিযোগ, এতে সহায়তা নয়, বরং অপমানই বাড়ছে। সংস্থাটি আরও জানায়, গাজাবাসী এখন উপত্যকাটির মাত্র ২০ শতাংশ জায়গায় গাদাগাদি করে রয়েছে, যার কারণে এই আকাশপথে ফেলা খাবার জনবহুল এলাকায় পড়ে। এতে ত্রাণের বস্তাগুলো তাঁবুর ওপর পড়ছে, মানুষ আহত হচ্ছে। আবার অনেক সময় ইসরায়েল ঘোষিত যুদ্ধাঞ্চলেও বিমান থেকে খাবার ফেলা হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলির ঝুঁকি রয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, ক্ষুধার ভয়াবহতাই এখন গাজার প্রধান শত্রু। তিন লাখেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে। গত এক মাসেই ১৬২ জন প্রাণ হারিয়েছে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতায়, তাদের অর্ধেকই শিশু। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসেবে, গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন মৃত্যুহার বিশ্বস্বীকৃত দুর্ভিক্ষের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছে তারা নাকি দিনরাত খাদ্য ও ওষুধ দিচ্ছে। জাতিসংঘ তা সরাসরি নাকচ করে বলছে, ফুটেজগুলো পুরানো, আর বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। এদিকে, সম্পূর্ণ স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ ও অস্ত্র ত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেন, বন্দিমুক্তির চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত উপত্যকাটিতে তেল আবিবের সামরিক অভিযান চলবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

গাজায় পাঁচ দেশের বিমান সহায়তা
তবুও কাটছে না খাদ্য সংকট
- আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৭:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৭:৪৩:৪৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ