* যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই : বাণিজ্য উপদেষ্টা
* যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানো নিয়ে যে বার্তা দিলেন আইন উপদেষ্টা
* যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি : প্রেস সচিব
* যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমায় আমরা খুশি, তবে চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে : পোশাক উদ্যোক্তা শোভন
* শুল্কের হার কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রফতানি খাতের জন্য ‘সন্তোষজনক অবস্থা’: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য-বিএনপির
* মার্কিন শুল্ক কমায় বাজার হারানোর শঙ্কা দূর হয়েছে : শামীম আহমেদ
* যুক্তরাষ্ট্রের ২০% শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ : সেলিম রায়হান
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানাই। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়। গতকাল শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষজন। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। তবে মার্কিন শুল্ক কমায় বাংলাদেশের বাজার হারানোর শঙ্কা দূর হয়েছে।
এরআগে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এ সিদ্ধান্ত দেন। নতুন এ শুল্ক গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত জানায়। তবে এবার তা ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানো হয়েছে। শুল্ক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এ হার নির্ধারণ করা হয়। তবে নতুন শুল্ক হার অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। কারণ বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। এই শুল্ক শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, আরও বেশ কিছু দেশের ওপরও আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ এবং ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসানো হয়েছে। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। পরে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য তা স্থগিত করা হয়। আলোচনা শেষে ৩১ জুলাই সময়সীমা শেষ হয় এবং ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হয়। শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। প্রতিনিধি দলে আরও আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে তারা টানা তিন দিন বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ সত্ত্বেও আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছি। রফতানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা নেই। তবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল শুল্ক হার আরও কম হবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শুল্ক হার প্রত্যাশিতের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের প্রতি অটুট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন এবং শুল্ক, অশুল্ক বাধা ও জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ জটিল এক আলোচনার প্রক্রিয়া দক্ষতার সঙ্গে অতিক্রম করেছেন। তারা যে চুক্তিটি অর্জন করেছেন, তা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ধরে রেখেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের মৌলিক জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে। তিনি বলেন, এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না, বরং আরও বৃহত্তর সুযোগ। দ্রুততর প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়ী সমৃদ্ধির দরজাও উন্মোচন করে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আজকের এই সাফল্য আমাদের জাতির দৃঢ়তা ও আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির এক শক্তিশালী প্রমাণ।
যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই : বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা জানান। বানিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নিচে প্রত্যাশা করেছিলাম। এছাড়া ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানো নিয়ে যে বার্তা দিলেন আইন উপদেষ্টা : বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষুদে বার্তা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুকে তিনি পোস্ট দেন। ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা লিখেন, ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ। অ্যানাদার সাকসেস অফ ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় গণমাধ্যমকে এ কথা জানান তিনি। শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আসলে নন-ডিসপোজাল (অপ্রকাশ্য)। অনেক কিছু জানলেও এখন বলা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনো চুক্তি করা হয়নি, কোনো সামরিক চুক্তিও হয়নি। সরকারের জন্য একটি সফলতা। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অন্য কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। যতটুকু সম্ভব বিষয়গুলোকে সহজিকরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি শুল্ক থাকায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকছি না। পাশাপাশি বাণিজ্য ঝুঁকিও কমে যাচ্ছে।
শুল্কের হার কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রফতানি খাতের জন্য ‘সন্তোষজনক অবস্থা’ : বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রফতানি খাতের জন্য একটি ‘সন্তোষজনক অবস্থা’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। যে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে একটা সন্তোষজনক অবস্থানে আছি। আমরা ২০%, পাকিস্তান ১৯%, ভিয়েতনামে ২০%, ভারতে ২৫%। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সার্বিকভাবে ট্যারিফের ফিগারটা সন্তোষজনক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে। ট্যারিফ বিষয়ে আমাদের প্রতিযোগিতাদের সঙ্গে সেটা হয়েছে ঠিকই আছে। এটা সন্তোষজনক। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের নতুন এই হারের পেছনে কী আছে সেই প্রসঙ্গটি টেনে সাবেক এ বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, পুরো নেগোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়টা তো আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু ট্যারিফের বিষয়টা জানি। সার্বিক বিষয়টা জানার পরে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো। এর (ট্যারিফ) বিপরীতে আর কী দিতে হয়েছে সেটা না জানা পর্যন্ত এর ইমপেক্টটা কী হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, নেগোসিয়েশনের পেছনের যে বিষয়গুলো এটা তো একটা প্যাকেজ। এখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু মাত্র ট্যারিফের কত পার্সেন্ট কমানো হলো সেটা সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক আলাপ-আলোচনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কী দাবি-দাওয়া ছিল এই বিষয়গুলো প্রকাশ হলে আমরা বুঝতে পারব। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারণে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন, এখন কী তারা স্বস্তির মধ্যে এসেছেন বলে মনে করেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, আমি তো বলছি, আপাতত ২০% ট্যারিফ নির্ধারণ অন্তত এই মুহূর্তে আমাদের রফতানি বাজার বাধাগ্রস্ত করবে না। সুতরাং এই মুহূর্তে এটা সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত। তবে এটার সঙ্গে জড়িত অনেক যে বিষয়গুলো আছে সেটা তো আমাদের জানা নেই। সেগুলো আমরা যখন জানব তখন মন্তব্য করতে পারব। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার একটা কথা বলেছেন এটার সঙ্গে ট্যারিফের কোনো সম্পর্কের কিনা প্রশ্ন করা হলে আমীর খসরু বলেন, না, কিছু তো করতেই হবে। কারণ আমেরিকানদের পুরো ট্যারিফের বিষয়টা হচ্ছে, আমেরিকানদের পণ্য রফতানির স্বার্থে। সেজন্য তো এই অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বাংলাদেশ কতটুকু এবজরভ করতে পারবে, আমাদের অর্থনীতি কতটুকু এবজরভ করতে পারবে, ব্যবসায়ীরা কতটুকু এবজরভ করতে পারবে, ইকোনমি কতটুকু এবজরভ করতে পারবে সেই বিষয়গুলো আলোচনার বিষয়। আমরা বিস্তারিত জানলে সেটার ওপর মন্তব্য করতে পারব। আমি মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুরো বিষয়টা খোলাসা করা উচিত। আমির খসরু বলেন, বাণিজ্য শুধু আমেরিকার সঙ্গে নয় অন্যান্য দেশে সঙ্গেও আমাদের পণ্য রফতানি হয়। সেই জায়গাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে আমরা কোথায় দাঁড়াচ্ছি সেটা বুঝতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে রফতানিটা আমাদের আরও বেশি ডাইভারসিফাই করতে হবে। বিদেশে ডাইভারসিফাই করতে, দেশেও ডাইভারসিফাই শুধু আমেরিকা নির্ভরশীল অর্থনীতি হতে পারে না। সেটাই হচ্ছে আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।
মার্কিন শুল্ক কমায় বাজার হারানোর শঙ্কা দূর হয়েছে : বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেছেন, শুল্ক কমায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক রফতানির বাজার হারানোর শঙ্কা কেটে গেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক রফতানিকারক প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্ক কাছাকাছি, অনেক ক্ষেত্রে বেশি থাকার কারণে আমরা রফতানিতে এখন সুবিধা পাবো। যেমন আমাদের অন্যতম প্রতিযোগী ভারতের শুল্ক আমাদের চেয়ে বেশি দিতে হবে, সেখানে আমরা এগিয়ে যাবো। চীনের সঙ্গেও সুবিধা পাবো। তৃতীয় দফার আলোচনা শেষে ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। শামীম আহমেদ বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে এখন প্লাস্টিক রফতানির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে। অন্যান্য দেশের বড় বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ করা হয়তো সুবিধা হবে। শুল্ক আলোচনায় নিজেদের শক্ত অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে সফলভাবে পারস্পরিক শুল্ক আলোচনার সমাপ্তি হয়েছে। তাদের যোগ্যতায় আমরা অনুকূল শর্ত অর্জন করেছি। তিনি বলেন, এটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের পণ্য বিক্রি করার বিষয় নয়, এটি এমন একটি আলোচনা-যা প্রমাণ করে যে আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সামগ্রী কেনার সক্ষমতা আছে। এটি বৈশ্বিক অঙ্গনে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি প্রদর্শন করে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার। প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত, অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয় ভারতে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০% শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ : ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তবে চীনের উপর এখনো শুল্ক নির্ধারিত না হওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে সারাবাংলার কাছে এসব মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পালটা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা রফতানি খাতের জন্য একটি ইতিবাচক ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ। এই হারের সংশোধন যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের কাঠামোর একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এসেছে, যা দেশটির অনেক বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর প্রযোজ্য বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করে। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কাঠামোতে আরও বেশি স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। এই অভিজ্ঞতা থেকে তিনটি কৌশলগত অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে উঠে আসে। প্রথমত, বাংলাদেশকে রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্য ও নতুন বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। একটি সংকীর্ণ পণ্যভিত্তিক এবং কিছু নির্দিষ্ট গন্তব্যনির্ভর রফতানি কাঠামো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিনির্ভরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য, কর ও বিনিয়োগনীতিতে কার্যকর সংস্কার প্রয়োজন, যাতে প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়। তৃতীয়ত, বাংলাদেশকে এখন এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে লক্ষ্যভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অনুসন্ধান করা উচিত। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের হারের এই হ্রাস আশাব্যঞ্জক হলেও, এটি আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা তৈরি করে না। বরং, এটি একটি সুযোগ এবং একই সঙ্গে একটি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে একটি বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক এবং সহনশীল বাণিজ্য কৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমায় আমরা খুশি : যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমানোয় বাংলাদেশের পোশাক উদ্যোক্তারা খুশি হয়েছে। তারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিকারক স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম। শুক্রবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। শোভন ইসলাম বলেন, আমরা খুশি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের ওপর দ্বিপাক্ষিক শুল্ক ২০ শতাংশ এ কমিয়েছে, যা আগের ৩৫ শতাংশ থেকে কমেছে। যদিও এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ২০ শতাংশ এখনো উচ্চ এবং মোট কার্যকর শুল্ক প্রায় ৩৫ শতাংশ হওয়ায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এই সমানতা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিকে কিছুটা সুবিন্যস্ত করেছে, তবে আমাদের ডিজাইন ইনোভেশন, উৎপাদন দক্ষতা, শিল্পায়ন এবং পণ্য বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে এই অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছি, বিশেষ করে ৩১ জুলাই থেকে বন্ধ থাকা শিপমেন্টের জন্য। অনেক অংশীদার আগের হ্রাসের পরে ইতোমধ্যে ডিসকাউন্ট দিয়েছেন এবং আমরা ইতিবাচক সমাধানের আশা করছি। তিনি বলেন, শিল্পের প্রবৃদ্ধি শুধুই শুল্ক কমাতে নয়, সরকারের সমর্থনেও নির্ভর করে। যেমন : গ্যাস ও বিদ্যুতের স্বল্পতা, অবকাঠামো সমস্যা, দুর্নীতি, বন্দরে জটিলতা, ব্যাংকিং সমস্যা ও বিভিন্ন নীতিগত বাধা। পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, সঠিক পরিবেশ ও অব্যাহত উদ্ভাবনের মাধ্যমে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প শুধুমাত্র বর্তমান শুল্কের চাপ কাটিয়ে উঠবে না, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে তার শেয়ার বৃদ্ধি করবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

শুল্কের হার ২০ শতাংশে আনা আনন্দের বন্যা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি সরকারের কূটনৈতিক বিজয়
- আপলোড সময় : ০২-০৮-২০২৫ ১২:১১:২২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৮-২০২৫ ১২:১১:২২ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ