কিশোরগঞ্জ জেলাকে ভেঙে বাজিতপুরকে জেলা করার জন্য দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে আসছে বাজিতপুরবাসী। তাদের দাবি, বাজিতপুর ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে এবং কিশোরগঞ্জ সদর থেকে তুলনামূলকভাবে দূরে অবস্থিত হওয়ায় এলাকার মানুষ নানা ধরনের সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজ শুক্রবার বিকাল ৩টার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের ৩য় তলা আব্দুস সালাম হলে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বাজিতপুর উপজেলাকে জেলায় রূপান্তার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও সূধী সমাবেশ এর আয়োজন করেছে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চার্লস টাউন অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইউম, বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এহসান কুফিয়া। সংবাদ সম্মেলন ও সুধী সমাবেশের সভাপতিত্ব করবেন জেলা বাস্তবায়ন কমিটির কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক তফাজ্জল হোসেন বাদল। এর আগে ২৭ জুলাই বিকাল ২টা ৩০ মিনিটে বাজিতপুর উপজেলার ওসমানপুরে অবস্থিত ড. ঘোষ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রাঙ্গণে বাজিতপুরকে জেলা করার দাবিতে এক প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাজিতপুর কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যতম জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। পৌরসভা, সরকারি কলেজ, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, থানা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চল এখনো জেলার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা বলেন, বাজিতপুর ইতোমধ্যেই অবকাঠামোগতভাবে একটি জেলার রূপ নিয়েছে, তাই এখন সময় এসেছে একে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণার।
এ বিষয়ে বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির কার্যকরী সভাপতি অধ্যাপক তফাজ্জল হোসেন বাদল বলেন, বাজিতপুরকে জেলা করা আমার স্বপ্ন নয়, এটি আমার শপথ। প্রয়োজনে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি এর বাস্তবায়ন করবো। এটা কেবল একটি প্রশাসনিক ঘোষণা নয়, এটা এই অঞ্চলের মানুষের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন, প্রজন্মের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। বাজিতপুর জেলা হবেই। এসময় বক্তারা নদ-নদীর দূষণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস এবং ভূমি অবনমন সম্পর্কেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা ‘হাইড্রোগ্রামীন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা পানি ও পরিবেশ সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল বোরহান। তিনি বলেন, আমি জরুরি একটা মিটিংয়ে আছি, তাই বিস্তারিত জানাতে পারবো না। আমাদের সভাপতিকে ফোন দেন, তিনি সংবাদ সম্মেলন ও আন্দোলনের বিষয়ে সবকিছু বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ফারুক আহাম্মদ জানিয়েছেন, বাজিতপুরবাসী শতবর্ষ ধরে জেলার দাবি করছে। একটি জেলার জন্য যেসব অবকাঠামো প্রয়োজন, বাজিতপুরে এর সবই রয়েছে। নতুন করে কোনো জেলা ঘোষণা করতে হলে দেশের ৬৫তম জেলা করতে হবে বাজিতপুরকেই। বাজিতপুরে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণ করা জমি থাকায় নতুন জেলার জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করলে বাজিতপুরই জেলার প্রকৃত দাবিদার।
আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮৬৯ সালে ময়মনসিংহের আগে বাজিতপুরে পৌরসভা স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ সরকার ১৯১২ সালে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমাকে ভাগ করে বাজিতপুরকে পৃথক মহকুমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে ওই বছরই বাজিতপুরে প্রায় ২০৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে প্রশাসনিক ভবনসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। ১৮২৩ সালে ‘বাজিতপুর’ ও ‘হয়বতনগর’ নামে দুটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে হয়বতনগরকে কিশোরগঞ্জ ও বাজিতপুরকে ভেঙে কয়েকটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জানা যায়, বাজিতপুরকে মহকুমা করতে ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার লেভিঞ্জ কমিশন, ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার তিন সদস্যের হাসান বাউন্ডারি কমিশন ও ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার অবিভক্ত ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক রাফিউল করিমের নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কমিশন গঠন করে। তিন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনেই এ অঞ্চলের মধ্যবর্তী থানা বাজিতপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে বাজিতপুরে ভৈরবসহ পাঁচ থানার সহকারী জজ (দেওয়ানি) আদালত কার্যকর রয়েছে। ভৈরব, কুলিয়ারচর ও বাজিতপুরের পুলিশ সার্কেল (এএসপি) কার্যালয়ও বাজিতপুরেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ সংবাদ সম্মেলন
কিশোরগঞ্জ ভেঙে বাজিতপুরকে জেলায় রূপান্তরের দাবি
- আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০৩:০৬:৩১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০৩:০৬:৩১ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ