ঢাকা , শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫ , ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো বাংলাদেশের ওপর নিবিড় নজর রাখছি : জয়শঙ্কর ‘চূড়ান্ত কূটনৈতিক বিজয়’ বলছেন প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি সরকারের কূটনৈতিক বিজয় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৩৮ গাজীপুরে শাপলা তুলতে গিয়ে বিলের পানিতে ডুবে ২ যুবকের মৃত্যু পাবনায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ চলতি বছর করোনায় আক্রান্ত ৭২০ জন মৃত্যু আরও এক ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে রাকসু নির্বাচনের প্রার্থিতা বাতিল গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা যশোরে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি চাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ হাজারীবাগে বৃদ্ধা নারীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ বরিশালে বাড়িতে হামলা করে যুবককে হত্যা কিছুদিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা লোকসানে বন্ধ হচ্ছে পোলট্রি খাতের হাজার হাজার প্রান্তিক ক্ষুদ্র খামার পোরশায় ধর্ষণ মামলার আসামি আবুল হাসান গ্রেফতার কোনো দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই : সেনা সদর সর্দি-জ্বরে জর্জরিত দেশ

প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অনুমোদনে চরম অনিয়ম

  • আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০৩:০৫:১৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৫ ০৩:০৫:১৩ অপরাহ্ন
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অনুমোদনে চরম অনিয়ম
* নিয়ম লঙ্ঘনে ১৩১টি বিদ্যালয়কে অনুমোদন, অথচ ২৪ জেলায় নেই কোনো বিদ্যালয়
* বিগত সরকারের সময়ের এই অনিয়ম নিয়ে বিপাকে পড়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
প্রসেনজিত চৌধুরী
প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা বিস্তারে ২০১৯ সালে ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা’ প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার। নীতিমালার লক্ষ্য ছিল- প্রতিটি জেলায় একটি করে বিদ্যালয় স্থাপন। সেই হিসেবে ৬৪ জেলায় ৬৪টি বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার কথা। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘন করে সারা দেশে মোট ১৩১টি বিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই জেলায় পড়েছে একাধিক বিদ্যালয়, অথচ ২৪ জেলায় নেই একটিও। বিগত সরকারের সময়ের এই অনিয়ম নিয়ে বিপাকে পড়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এদিকে, পাঁচ আগস্টের পর নতুন করে দেড় হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির দাবি তুলেছেন এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা। আগের অনিয়মের প্রতিকার আর নতুন এ দাবি নিয়ে বেশ চাপে পড়া মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি অনিয়ম করে পাওয়া বিদ্যালয়ের অনুমোদন বাতিল এবং বঞ্চিত জেলাসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন বিদ্যালয় অনুমোদন দিতে সুপারিশ করার কথা ভাবছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত বিদ্যালয় অনুমোদন এবং বিভিন্ন জেলায় একটিও বিদ্যালয় অনুমোদন না দেওয়ার অনিয়ম পর্যালোচনায় মন্ত্রণালয় একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি মাঠপর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং আর্থিক স্বচ্ছতা— সব খতিয়ে দেখছে।
এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা অধিশাখার যুগ্মসচিব শামীমা ফেরদৌস। এ ছাড়া, কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি) মো. এহেতেশাম রেজা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস. এম. নোমান হাসান খান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, নীতিমালার ব্যত্যয় হওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে প্রতি জেলায় সর্বশেষ প্রতিবন্ধী জরিপ, মানদণ্ড না মানা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল বা স্থগিত করার সুপারিশ এবং স্বীকৃতি বঞ্চিত জেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্কুল অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করার কথা ভাবছি।
২০১৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যখন অনলাইনে আবেদন আহ্বান করে, তখন ১ হাজার ৭৭২টি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি এবং ৯২৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওর আবেদন করে। তাদের মধ্যে থেকে উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া বিদ্যালয়গুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পরিদর্শনে দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিক শর্ত বা নীতিমালার মানদণ্ড পূরণ না করেও অনুমোদন পেয়েছে। একই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে একাধিক আবেদন, শিক্ষক উপস্থিতি না থাকা, নোটিশে ছাত্র-শিক্ষকের ‘দেখানো’ উপস্থিতির মতো অনিয়ম উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে। 
নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, নিবন্ধন ও স্বীকৃতির ক্ষেত্রে নীতিমালার ১৩ (১) নং ক্রমিকে বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি জেলায় একটি বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি মোতাবেক ন্যূনতম ৫০০ (পাঁচশত) জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য সংখ্যার ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের প্রাপ্যতা যাচাইঅন্তে সরকার পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করবে কিন্তু মন্ত্রণালয়য়ের পরিদর্শন সারাংশ বলছে, বাস্তবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আর্থিক শর্ত, নিবন্ধিত দলিল, আলাদা রেজিস্ট্রেশন ও ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়গুলো অনেক প্রতিষ্ঠানই উপেক্ষা করেছে। তবুও তারা স্বীকৃতি পেয়েছে। আবার বর্তমানে যারা অনুমোদন চাইছে তারাও নীতিমালার বেশিরভাগ শর্তই মানছে না। নীতিমালায় প্রতি জেলায় একটি করে বিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা উপেক্ষা করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমুহে একাধিক বিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। আবার দেশের অন্তত ২৪টি জেলায় একটিও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই। ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার মধ্যে ৪টি জেলায় এমপিওভুক্ত কোনো প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে- মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে পাঁচটি জেলায় কোনো বিদ্যালয় নেই। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে- লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার। রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে ৫টিতেই নেই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার পাঁচটিতে নেই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে- চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা ও মেহেরপুর।
বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার মধ্যে একটি (বরগুনা) জেলায় কোনো প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই। সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মধ্যে দুটি জেলায় কোনো প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই। এগুলো হলো- হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে একটি (পঞ্চগড়) জেলায় কোনো প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে কোনো প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বিদ্যালয়সমূহের পাঠদান স্বীকৃতি বা এমপিওভুক্তির আবেদনপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এরপরও সেই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আবেদনকৃত নবপ্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহ পরবর্তী সময়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি ছাড়া পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নোটিশ দিয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতির চিত্র একরকম অর্থাৎ উপস্থিতির হার বেশি এবং নোটিশ ছাড়া পরিদর্শনে ভিন্ন চিত্র অর্থাৎ শিক্ষক-ছাত্র উভয়ের উপস্থিতির হার কম অথবা বন্ধ। তিনি বলেন, পরিদর্শনে আমরা দেখেছি— শিক্ষক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত এবং যোগ্যতার বিষয়ে সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯-এর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করেনি। তবুও স্বীকৃতি তাদের লাগবেই।
আবেদনকৃত বিদ্যালয়সমূহের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য নীতিমালায় বিভিন্ন শর্তাবলীর মধ্যে বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, ব্যক্তির নামে নামকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে এককালীন ন্যূনতম ১০ (দশ) লাখ টাকা জমা প্রদান, দাতা সদস্য হতে হলে বিদ্যালয়ে ব্যাংক হিসাবে এককালীন ন্যূনতম ২ (দুই) লাখ টাকা জমা প্রদান, প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা নিবন্ধন থাকার উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব শর্ত অনুসরণ করা হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ২০১৯ সালে যখন এসব বিদ্যালয়ের জন্য আবেদন চাওয়া হয়, তখন কোনো কোনো স্কুল থেকে অনলাইনে দুই থেকে তিনবারও একই আবেদন জমা দিয়েছে। এরপর এসব আবেদন তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিনে তদন্ত করেছিলেন, কিন্তু সেসব রিপোর্ট এখানে পড়ে আছে। রিপোর্টগুলো যেভাবে এসেছে, সেভাবেই রয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে পরে আর কোনো কাজ হয়নি।
সম্প্রতি স্বীকৃতির দাবিতে হওয়া আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশে তাদের যত আবেদন আছে, সেগুলোর স্বীকৃতি তারা চাচ্ছে। এসব আবেদনের মধ্যে অনেকের পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক নেই, অনেকের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সরকার এই মুহূর্তে নীতিমালার বাইরে গিয়ে এগুলো দেবে কি না। কিছু কিছু জেলায় আমাদের কোনো স্কুল নেই। সেসব জেলাগুলো নিয়ে আমাদের একটা সফট কর্নার আছে যে সেখানে স্কুল হওয়া দরকার। এর বাইরে মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ২০২০-২১ সালের দিকে করা আবেদনগুলোর তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এসব তদন্ত প্রতিবেদন খুলে দেখছি না। কারণ, আগে মন্ত্রণালয়কে তো একটা নীতিগত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা আর কোনো বিদ্যালয়কে অনুমোদন দেব কি দেব না।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অনুমোদন নিয়ে অনিয়ম যাচাই কমিটির আহ্বায়ক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা অধিশাখার যুগ্মসচিব শামীমা ফেরদৌস বলেন, যেসব জেলাগুলোতে একদমই বিদ্যালয় নেই, সেসব জেলাগুলো সম্পর্কে আমরা সার্বিকভাবে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। সারা দেশে মোট কতজন প্রতিবন্ধী আছে সেটা নিয়ে একটা জরিপ হবে। প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অনুযায়ী কতটি বিদ্যালয় থাকা উচিত, এগুলো জরিপের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিদ্যালয় থাকার কথা কিন্তু আমরা দেখেছি কোথাও অনেক বেশি আছে আবার কোথাও একদমই নেই। সবকিছু নির্ভর করছে আসলে প্রতিবন্ধীদের জরিপের ওপর।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শুধু অনুমোদন দিলেই কাজ শেষ নয়। কারণ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি ফাংশন রয়েছে। স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির বিষয়টি শুধু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে নেই। এটি অর্থ বিভাগের অনুমোদনের সঙ্গেও জড়িত, যা নীতিমালার ১৩(২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে। কতটি বিদ্যালয় অনুমোদন পেলে অর্থ মন্ত্রণালয় সেটার বেতন ছাড়ের অনুমোদন দেবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। ফলে, প্রতিষ্ঠান অনুমোদন কিংবা এমপিও কার্যকরে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মো. ইলিয়াস রাজ বলেন, আমাদের মূল দাবি শিক্ষকরা যেন অতিদ্রুত বেতনের আওতায় আসেন। এখনো তারা বিনা বেতনে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চাই আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করা হোক। বাচ্চাদের ফিজিওথেরাপির মেশিন, উপযুক্ত ক্লাসরুম, স্যানিটেশনসহ অন্যান্য সব সরকারি সুবিধাগুলা নিশ্চিত করা হোক। আমরা চাই সরকার স্কুলগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার আগে এগুলো নিশ্চিত করুক। কারণ, স্কুলগুলো চলমান আছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধিতা কোনো সীমাবদ্ধতা নয়- সঠিক সহায়তা, শিক্ষা ও সম্মান পেলে তারাও রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে, সবার জন্য শিক্ষা তখনই বাস্তবায়নযোগ্য হবে, যখন প্রতিবন্ধী শিশুরাও সমানভাবে সেই সুযোগ পাবে। ২০১৯ সালের ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা’ আমাদের একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এ নীতিমালার আলোকে আমরা শুধু বিদ্যালয় অনুমোদন দিচ্ছি না, বরং শিশুদের জীবন দক্ষতা, সামাজিক মেলবন্ধন এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। সচিব বলেন, বিগত সরকারের আমলে কিছু ক্ষেত্রে চাহিদার চেয়ে কম সংখ্যক স্কুল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার বেশি হয়েছে। এজন্য আমরা পর্যালোচনায় গিয়েছি। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা, যাচাই-বাছাই, অনিয়ম ও গ্যাপ শনাক্ত করছে। এ প্রতিবেদন এলে একটি প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই— একটি শিশু, যে দৃষ্টিশক্তিহীন বা হুইলচেয়ারে বসা, অথবা যাকে অটিজম অবস্থার জন্য কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না, সে যেন ক্লাসে বসে বই পড়ে, হাতে কলম ধরে, স্বপ্ন দেখে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সেই স্বপ্নের হাত ধরেই এগোচ্ছে। সচিব আরও বলেন, সরকারকে চাপে ফেলে আন্দোলন করে যারা বিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতে চাইছেন তারা ভুল পথে হাঁটছেন। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছি। শিক্ষক নেই, অবকাঠামো নেই, নীতিমালার বালাই নেই— এমন বিদ্যালয় আবেদন করলেই তো আর সেটার অনুমোদন দেওয়া যায় না। তবে, যেসব জেলায় এখনো কোনো স্বীকৃত বিদ্যালয় হয়নি, সেসব জেলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই-নীতির যথাযথ প্রয়োগ হোক, তবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যেন হারিয়ে না যায়। প্রতিটি শিশুর সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে আমরা শৃঙ্খলার সঙ্গে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য