 
                            
                        দ্বিগুণ দাম, অর্ধেকে নেমেছে বৃক্ষমেলার বিক্রি
সবুজায়ন স্বপ্নে খরা
- আপলোড সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ১০:৫৭:০৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                            
                               চোখে বিস্ময়, হাতে খালি পলিথিন। ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় বৃক্ষমেলায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত ঘরের গৃহিণী আফিয়া আক্তারের কণ্ঠে বিরক্তির ছাপ! বললেন, গত বছর পাঁচটা ফলদ আর তিনটা শোভাবর্ধনকারী গাছ কিনেছিলাম মাত্র ৬০০ টাকায়। এবার একটা শোভাবর্ধন গাছই কিনেছি ৬০০ টাকায়। আরেকটি গাছ পছন্দ হলো, দাম চায় ৯০০ টাকা। এই দাম দিয়ে গাছ কেনা তো বিলাসিতা! অফিয়া আক্তার একা নন, এমন অভিযোগ করেছেন আরও অনেকেই। এক সময় যারা গাছ কিনে বাসায় ফিরতেন মাটির গন্ধ নিয়ে, এবার তাদের অনেকেই ফিরছেন হাতে গাছের বদলে আক্ষেপ নিয়ে। শুধু আবেগের গল্প নয়, পরিসংখ্যানও বলছে সেই কথাই। ২০২৫ সালের বৃক্ষমেলায় গাছ বিক্রির পরিমাণ ও মোট বাণিজ্য, উভয়ই ক্ষেত্রেই ভাটা পড়েছে। তবে গাছের গড় মূল্য বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বছর দুয়েক আগেও ৮০-১০০ টাকায় পেয়ে যেতাম জাম, কদবেল, আমের চারাসহ ক্যাকটাস। এবার সেই গাছের দাম ২৫০-৩০০ টাকা! আর বড় গাছের দিকে তো নজর দেওয়ার সাহসই এবার হয়নি। চলতি বছরের জাতীয় বৃক্ষমেলায় বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯১টি চারা গাছ। যার বিপরীতে বাণিজ্য হয়েছে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ২৭৪ টাকার। অথচ ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছিল ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩টি গাছ, বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ১০ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানেই এবার ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৩০২টি গাছ কম বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ২০২৪ সালে গাছের গড় মূল্য ছিল ৫১ টাকা। এবার সেটি দাঁড়িয়েছে ৮৮ টাকায়। আরও পেছনে যাওয়া যাক-২০২৩ সালে গাছ বিক্রির সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৭ হাজার ২৮৭টি, বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬০ টাকায়। এভাবে তিন বছরের তুলনায় স্পষ্ট এক পতনের রেখা চিত্র। গাছ বিক্রি কমেছে ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ, অথচ দাম কমেনি বরং বেড়েছে। আমার ছাদ বাগান আছে। টিফিনের টাকা বাঁচিয়েই গাছ কিনি। আর গাছ কেনার জন্য টার্গেট থাকে জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবার বাজেট ছিল দেড় হাজার টাকা। আশা করেছিলেন পছন্দের অন্তত ৬ গাছ কিনবো। গেলো বছর এই টাকাতেই পুরো মেলা ঘুরে ১০টা গাছ কিনেছিলাম। কিন্তু এবার ৩টা গাছ কিনতে পেরেছি। গাছ দেখেছি, পছন্দও হয়েছে। কিন্তু শুধু তাকিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। খিলগাঁও থেকে আসা এক তরুণ উদ্যোক্তা ও ছাদবাগানপ্রেমী প্রিয়াঙ্কা বলেন, বছর দুয়েক আগেও ৮০-১০০ টাকায় পেয়ে যেতাম জাম, কদবেল, আমের চারাসহ ক্যাকটাস। এবার সেই গাছের দাম ২৫০-৩০০ টাকা! আর বড় গাছের দিকে তো নজর দেওয়ার সাহসই এবার হয়নি। হোসেন আলী নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমার ছাদ বাগান আছে। টিফিনের টাকা বাঁচিয়েই গাছ কিনি। আর গাছ কেনার জন্য টার্গেট থাকে জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবার বাজেট ছিল দেড় হাজার টাকা। আশা করেছিলেন পছন্দের অন্তত ৬ গাছ কিনবো। গেলো বছর এই টাকাতেই পুরো মেলা ঘুরে ১০টা গাছ কিনেছিলাম। কিন্তু এবার ৩টা গাছ কিনতে পেরেছি। গাছ দেখেছি, পছন্দও হয়েছে। কিন্তু শুধু তাকিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। বৃক্ষমেলায় আগত আরও অনেকেরই অভিন্ন অভিযোগ দাম অস্বাভাবিক, দর কষাকষির সুযোগ নেই, মনগড়া মূল্যে গাছ বিক্রি করছে একাধিক বড় নার্সারি। আশরাফুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি একটি কাগজি লেবুর গাছ ফলসহ দাম বলেছিলেন দুই হাজার ৫০০ টাকা। দোকানির দাম চেয়েছিলেন ৩ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়েছে এই ব্যক্তিকে। কণ্ঠে ছিল আক্ষেপ। তিনি বলেন, লেবুগুলো দেখে গাছটা পছন্দ হলো। কিন্তু দাম তো আকাশচুম্বী। সঙ্গে ওয়াইফ আছে। ওর পছন্দ হয়ে গেছে। আড়াই হাজার টাকা দাম বললাম, তাও দিলো না। এবার পুরো মেলা গেলো বৃষ্টির মধ্যে। অনলাইনে যারা ব্যবসা করে তারা ৩০০ টাকার গাছ ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছে। কিন্তু আমরা তো পারিনি। আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতিই হয়েছে। ২ লাখ টাকার বেচাবিক্রি করতে পেরেছি। অথচ ২০২১ সালে ৮ লাখ টাকার বিক্রি করেছিলাম। আর লাভ কি করবো। স্টলে ১০ হাজার, ডেকোরেশন ২৫ টাকা, টাইলস করতে ১২ হাজার, রাস্তার জন্য ৮ হাজার, পানিতে ৬ হাজার, কারেন্ট সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুধু আমি না, অন্যরাও এবার লাভবান হতে পারেনি। গাছের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে নার্সারি মালিকরা বলেন, সার, মাটি, পাত্র, শ্রমিক-সব কিছুর দামই তো বেড়েছে। এক গাছ তৈরিতে যে খরচ হচ্ছে, সেটা তো ক্রেতারা বোঝেন না। আর শৌখিন গাছের দাম একটু বেশিই হয়। তাছাড়া দাম স্বাভাবিকই আছে। মা নার্সারির মালিক সবুজ বলেন, এবার পুরো মেলা গেলো বৃষ্টির মধ্যে। অনলাইনে যারা ব্যবসা করে তারা ৩০০ টাকার গাছ ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছে। কিন্তু আমরা তো পারিনি। আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতিই হয়েছে। ২ লাখ টাকার বেচাবিক্রি করতে পেরেছি। অথচ ২০২১ সালে ৮ লাখ টাকার বিক্রি করেছিলাম। আর লাভ কি করবো। স্টলে ১০ হাজার, ডেকোরেশন ২৫ টাকা, টাইলস করতে ১২ হাজার, রাস্তার জন্য ৮ হাজার, পানিতে ৬ হাজার, কারেন্ট সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুধু আমি না, অন্যরাও এবার লাভবান হতে পারেনি। এবার মেলায় ফলদ গাছ ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৮৬টি, বনজ গাছ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০টি, ওষধি গাছ ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০টি, মসলা গাছ ১ লাখ ৫ হাজার ১৮০টি, ক্যাকটাস ১ লাখ ৬ হাজার ৪৫৪টি, অর্কিড ৭৭ হাজার ৫১৫টি, শোভাবর্ধনকারী গাছ ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৪টি, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ: ৩৮ হাজার ৮৫টি এবং অন্যান্য ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৫টি গাছ বিক্রি হয়েছে। আমরাও ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ নিয়েছি। সেখানে অতিরিক্ত দামের অভিযোগ অনেক ক্রেতাই করেছেন। এছাড়া এবার দামি গাছ কেনার মতো ক্রেতাও কম ছিল। আমাদেরকে ক্রেতারা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন: গাছের নামের সঙ্গে দামের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা, মেলার সঙ্গে কুরিয়ার সেন্টারের বুথ রাখা। এসব বিষয়গুলোকে আমরা নজর দিয়ে আগামী বছর আরও সুন্দর একটি মেলা উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা রাখবো। মেলার তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের সামাজিক বন বিভাগের বিজ্ঞানী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরাও ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ নিয়েছি। সেখানে অতিরিক্ত দামের অভিযোগ অনেক ক্রেতাই করেছেন। এছাড়া এবার দামি গাছ কেনার মতো ক্রেতাও কম ছিল। আমাদেরকে ক্রেতারা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন: গাছের নামের সঙ্গে দামের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা, মেলার সঙ্গে কুরিয়ার সেন্টারের বুথ রাখা। এসব বিষয়গুলোকে আমরা নজর দিয়ে আগামী বছর আরও সুন্দর একটি মেলা উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা রাখবো। পরিবেশবিদরা বলছেন, শুধু গাছ বিক্রির সংখ্যা নয়, আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে গাছ লাগানোর অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর দিকেও। ছাদবাগানে নজর দিতে হবে। রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদগুলো পরিত্যক্ত। এই ছাদগুলো যদি সরকারি নীতিমালার মাধ্যমে সবুজায়ন করা হয়, তাহলেও রাজধানীর সবুজায়নে আমূল পরিবর্তন আসবে।
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                