ঢাকা , রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
শিক্ষার্থীদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ৮ পরীক্ষককে আজীবন অব্যাহতি শিশু ও তরুণরা হয়ে উঠুক আগামী দিনের দেশপ্রেমিক-আইজিপি অন্তর্বর্তী সরকার মেরুদণ্ডহীন ও দুর্বল : নুর দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র পেল দগ্ধ দুই শিক্ষার্থী শ্রীপুরে শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে ২ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ মানসিক আঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসার তদারকির জন্য কমিটি গঠন সাধারণ মানুষ জানেই না আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি কী : মির্জা ফখরুল সংস্কারে এগোলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি চলতি সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা শহর-গ্রামাঞ্চলে বন্যা বিপর্যস্ত জনজীবন আধিপত্যে রক্তাক্ত পাহাড় নারায়ণগঞ্জে বৈধ কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন শুধু অভিযোজন নয় দরকার বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাস-পরিবেশ উপদেষ্টা সংলাপের নামে নাটক করছেন প্রধান উপদেষ্টা- কাজী মামুন খুলনায় ৬০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা ঢাকায় বসবাসরত সাংবাদিকদের মধ্যে বন্ডিং তৈরি করতে হবে মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুটপাট মাউশিতে বদলি বাণিজ্য ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি কেলেঙ্কারি তদন্ত শুরু সেঁওতি বাগানে টিএসআই রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন

আধিপত্যে রক্তাক্ত পাহাড়

  • আপলোড সময় : ২৭-০৭-২০২৫ ১২:৪০:৩১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০৭-২০২৫ ১২:৪০:৩১ অপরাহ্ন
আধিপত্যে রক্তাক্ত পাহাড়
* খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় গহীন অরণ্যে গোলাগুলিতে ৪ জন নিহত * তিন জেলায় প্রতিনিয়ত বিবাদে জড়াচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো * পার্বত্য অঞ্চলে হাজার কোটি টাকার চাঁদাই সকল অশান্তির মূল * হত্যাকাণ্ড, গোলাগুলি ও দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে আধিপত্য ও চাঁদাবাজিতে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো মেতে উঠছে খুনোখুনিতে। ঝরছে একের পর এক তাজা প্রাণ, রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়। এসব খুনোখুনি, অস্ত্রবাজি, আধিপত্য-সবই একই সূত্রে গাঁথা। সবকিছুর মূলে অর্থ। পার্বত্য অঞ্চলে বছরে হাজার কোটি টাকার চাঁদাই হচ্ছে সকল অশান্তির মূল। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ি দীঘিনালার বাবুছড়ায় ইউনিয়নের নারাইছড়ির জোড়া সিন্ধু কার্বারি পাড়া এলাকায় গোলাগুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। দীঘিনালায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাতাধীন (ইউপিডিএফ) সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা সবাই ইউপিডিএফ’র সামরিক শাখার সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জানা গেছে, নারাইছড়ির জোড়া সিন্ধু কার্বারি পাড়া এলাকায় ইউপিডিএফ সামরিক শাখা ‘গণমুক্তি ফৌজ ও পিপলস লিবারেশন আর্মির’ আস্তানায় হামলা করে জেএসএস। এসময় সন্তু লারমার জেএসএস ও প্রসিতপন্থী ইউপিডিএফের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত চারজন নিহতের খবর জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইউপিডিএফ দলের সশস্ত্র গ্রুপ কমান্ডার বিপ্লব চাকমার নেতৃত্বে ৪০-৪৫ জনের একটি দল এবং জেএসএস দলের সশস্ত্র কমান্ডার জয়দেব চাকমার নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জনের আরেকটি দল জোড়া সিন্ধু কারবারিপাড়া এলাকায় মুখোমুখি হয়। তখনই দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। এতে ইউপিডিএফ (প্রসিত)-এর সামরিক শাখা ‘গণমুক্তি ফৌজ’ বা ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’র চার সদস্য নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহতদের নাম-ঠিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দীঘিনালা থানার ওসি মো. জাকারিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, জোড়া সিন্ধু কারবারিপাড়া এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়েছি। এতে ইউপিডিএফ (প্রসিত)-এর সামরিক শাখা ‘গণমুক্তি ফৌজ’ বা ‘পিপলস্ লিবারেশন আর্মি’র চার সদস্য নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পুলিশের এই দাবি অস্বীকার করেন ইউপিডিএফের সংগঠক অংগ্য মারমা। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, চারজন নিহত হয়েছে বলে যে খবর প্রচারিত হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব। গোলাগুলির ঘটনার কোনো তথ্য ইউপিডিএফের জানা নেই। আবার ইউপিডিএফের ‘গণমুক্তি ফৌজ’ বা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ নামে কোনো সামরিক শাখা থাকার প্রশ্নই আসে না। এটি অবান্তর ও কাল্পনিক। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অংগ্য মারমা দাবি করেন, ভাইবোনছড়ায় ত্রিপুরা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী মিথ্যা প্রচারে নেমেছে। এ বিষয়ে অংগ্য মারমা গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তাদের দলের সঙ্গে ঘটেনি। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অপর একটি সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে নীরবে সাধারণ মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে সবুজ পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে চলে চাঁদাবাজি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, আনসার, ব্যাটালিয়নের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের নানা উদ্যোগ, অভিযান চলমান থাকলেও তারা এখনো অনিয়ন্ত্রিতই রয়ে গেছে। সবুজ বেষ্টনীর নীরব পাহাড়ে কতটা নিরাপদ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা, এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় ও সচেতন মহলের। যেখানে চাঁদা না দিয়ে চলে না গাড়ি, হাটে বিক্রি হয় না সবুজ ফসল। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞেও চাঁদা মাফ নেই কারোরই। কোনো ঠিকাদার নিদিষ্ট চাঁদা না দিলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের উন্নয়ন কাজ। পাহাড়ে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি সেক্টরে চাঁদা অনিবার্য। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পার্বত্য পাহাড়ি অঞ্চল। বর্তমান পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, জেলায় জেলায় ভিন্ন সংগঠনের আধিপত্য আর নিয়ন্ত্রণে এখানে চলে ভারী অস্ত্রের প্রদর্শন ও মহড়া। আর অস্ত্রধারী চাঁদাবাজদের হুংকারে ঘুম ভাঙে নিরীহ সাধারণের। এখানে সাধারণ মানুষ যেন অসহায় বোবা প্রাণী। এই মোটা অঙ্কের চাঁদার টাকা জন্যই চলে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াই। অন্যদিকে হানাহানি, দ্বন্দ্ব, আধিপত্য ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্বার্থের লড়াইয়ে পাহাড়ে বহে রক্তগঙ্গা!। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অর্থের বিনিময়ে জোগান দেয় এসব মারণাস্ত্র। প্রাণঘাতী সেইসব অস্ত্র পাহাড়কে করে তুলছে ভয়ানক ভয়াবহ। ফলে পার্বত্য অঞ্চল হয়ে উঠছে সন্ত্রাসের স্বর্গ। স্থানীয় ঠিকাদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বাগানি, কাঁচামাল ব্যবসায়ী, পরিবহন সেক্টর, জমির মালিক, কৃষিকাজে নিয়োজিত চাষিরাও এখন জিম্মি পাহাড়ি সংগঠনের চাঁদাবাজদের কাছে। এরপরও তাদের অকথ্য গালাগাল, মারধরের শিকার হচ্ছে পাহাড়ে নিজ দেশে পরবাসী মানুষগুলো। স্থানীয়দের প্রশ্ন এ দিনের শেষ হবে কবে? পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি, হত্যাকাণ্ড, বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি)’ হলেও সে কাক্সিক্ষত শান্তি ফেরেনি বলে দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ে বাঙালিদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতারা। পার্বত্যাঞ্চলে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এক সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাহাড়ে দিনে-দুপুরে অপহরণ, অত্যাচার, খুনাখুনি চলে। পরে সে অরাজকতা থামাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি) করে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র সাথে। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তারপর জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্বে পাহাড়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এদিকে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার ক্ষোভের মধ্যে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যেও দেখা দেয় বিভাজন। জেএসএস টুকরো হয়ে গড়ে ওঠে জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ) জেএসএস সংস্কার। প্রসিত বিকাশ খীসার দল ভেঙে ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি সংগঠন। যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তপন জ্যোতি বর্মা। পরে পাহাড়ে একের পর এক কয়েক বছরেই বাড়তে থাকে আঞ্চলিক সংগঠনের। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রক্তক্ষরণ আর অশান্তি। এত হত্যাকাণ্ডের পরও সুষ্ঠু কোনো সমাধান না হওয়ায় ভারী অস্ত্রের বুলেট কেড়ে নিচ্ছে তরতাজা প্রাণ। পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরও এসকল হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার নেই। কারণ এসব ঘটনার মূল হোতারা থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আর কলকাঠি নাড়ে অদৃশ্যে-যা সকলের জানা থাকলেও দৃশ্যত অজানা। চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে এসব হত্যাযজ্ঞ অনিশ্চিত করে তুলছে পাহাড়বাসীর শান্তি এবং সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ আরো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা’র নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার পর প্রসিত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় নতুন সংঘাত। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি (বুধবার) বেলা ১২টায় খাগড়াছড়ি সদরে গুলি করে হত্যা করা হয় মিঠুন চাকমাকে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে প্রসীতপন্থি ইউপিডিএফ। এরপর থেকে পাল্টাপাল্টি হত্যা-সংঘাত ঘটতে থাকে। এ ঘটনায় পার্বত্য জেলায় নানা কর্মসূচি-আন্দোলন করে ইউপিডিএফ। হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় ২০১৮ সালের ৩ মে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের (এমএন লারমা) সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করা হয়। তার একদিন পরই শক্তিমানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বেতছড়ি এলাকায় তাদের গাড়িতে অতর্কিতে ‘ব্রাশফায়ার’ করলে খালিয়াজুড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা, জেএসএসের সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির (এমএন লারমা) মহালছড়ি শাখার সভাপতি সুজন চাকমা, সদস্য তনয় চাকমা, রবিন চাকমা এবং তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসচালক মো. সজীবের নির্মম মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য প্রসিত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ-কে দায়ী করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে এটির নেতৃত্বে আছেন প্রসিত বিকাশ খীসা। তারা একাধিক সাধারণ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর দলটি প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়। দলত্যাগ করা নেতারা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। এতে নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক তপন জ্যোতি বর্মা। সূত্র জানায়, শুরু থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে (বর্মা) ইউপিডিএফ এ যুক্ত ছিলেন। ১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে (শনিবার সকালে) খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। পরে আরো একজনসহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ জনে। এ ঘটনায় নিহত হয় ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ-সম্পাদক এলটন চাকমা, ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমা। বাকি তিনজনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী জিরাত চাকমা। এছাড়াও এক বৃদ্ধ সে সময় মারা যায়। এ ঘটনার জন্য জেএসএস (এমএন লারমা) এবং মুখোশ বাহিনী আখ্যায়িত করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে’ দায়ী করে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপ। ১১ নভেম্বর ২০২৩ (সোমবার) রাতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে প্রসিতপন্থি ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, পিসিপির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিনসা ত্রিপুরাসহ ৪ জনকে হত্যা করা হয়। পানছড়ি অনিলপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-জেএসএস সংস্কারসহ দু’গ্রুপকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এ সকল ঘটনায় পার্বত্য এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পাহাড়ে আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আরো একাধিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে-তারাও সশস্ত্র সংঘাতের পথে হাঁটছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ভারী অস্ত্র প্রদর্শন করে পাহাড়ে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। মূলত আধিপত্য ধরে রাখতে পরপর আরো বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড পাহাড়ের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডকে অনেকে বলছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। প্রাণ হারানো পরিবার কী পাবে তাদের স্বজনদের? না পাবে বিচার-এসব প্রশ্নের মধ্যেও সবুজে বেষ্টিত শান্তির পাহাড়ে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়ানো হত্যাকাণ্ড-হানাহানি সংঘাত বন্ধে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীরা। যেখানে থাকবে না তাজা রক্তের গন্ধ, অস্ত্র, গুলির শব্দ, হানাহানি আর দ্বন্দ্ব। যে পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে এক খণ্ড শান্তি-সম্প্রীতির আবাসভূমি ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিটন চাকমা বলেন, পাহাড়ে প্রসিত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণকে অধিকার আদায়ের নামে প্রতারণা করে পাহাড়ে সন্ত্রাসী সংঘাতকে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। শতকোটি টাকার চাঁদায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিতে অসহায় পার্বত্যবাসী। প্রতিনিয়তই অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজির পরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব সন্ত্রাসীরা। এভাবে পাহাড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। আধিপত্যের লড়াইয়ে ঝড়ছে তাজা প্রাণ, বাড়ছে সংঘাত আর প্রাণঘাতী হানাহানি। গোলাগুলি, ব্রাশফায়ারে রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে নীরব সবুজ উপত্যকা। পাহাড়ের সচেতন মহলের দাবি, একের পর হত্যাকাণ্ড, গোলাগুলি, খুনোখনি, সংঘাত আর দ্বন্দ্বে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এদিকে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
সংস্কারে এগোলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি

সংস্কারে এগোলেও বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ কাটেনি