
মাউশিতে বদলি বাণিজ্য ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি কেলেঙ্কারি তদন্ত শুরু
- আপলোড সময় : ২৭-০৭-২০২৫ ১০:৫৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-০৭-২০২৫ ১০:৫৯:৪৮ পূর্বাহ্ন


মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) বদলি বাণিজ্য ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি, বদলি বাণিজ্য ও চাঁদা আদায়ের বিস্তৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্ত শুরু হয়।
সূত্র জানায়, মাউশির প্রশাসনিক কর্মচারী ও সাঁটলিপিকার পদে কর্মরত রয়েছেন অহিদুর রহমান। তিনি একসময় ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহার উদ্দিন বাহারের সুপারিশে ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে মাউশিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে আওয়ামীপন্থী গোপালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় দাপটের সাথে কাজ করেন দীর্ঘদিন।
৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে ‘ভোল পাল্টান’। নতুনভাবে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আব্দুস সাত্তারের নাম। এদের ছত্রছায়ায় তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ বদলি ও নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন অভিযোগে জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার ও কর্মচারীদের বদলির জন্য প্রতি জন থেকে ১-৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। একটি শাখা বদলির জন্য জনপ্রতি ১ লাখ টাকা, আর গুরুত্বপূর্ণ কলেজ ও অফিস পদে পদায়নের জন্য ৫-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়।
মাউশির ভেতরেই গড়ে উঠেছে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট, যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন অহিদ। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন আইন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শাহজাহান, অডিট শাখার জামান হোসেন, পরিকল্পনা শাখার পরিচালকের পিএ মোবারক উল্লাহ মিঠু, মেহেদী হাসান, শিবলী মোল্লা, রাজিব ও কাইউমসহ একাধিক কর্মচারী। শুধু বদলিই নয়, অভিযোগ আছে যে, ভুয়া নিয়োগ ও আটকে থাকা এমপিওভুক্তির কাজও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে করে দিচ্ছেন অহিদ চক্র। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির জন্য নেয়া হয় ২-৩ লাখ টাকা। আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জন্য ডিলিং ক্লার্কদের মাধ্যমে চাঁদা তোলারও অভিযোগ রয়েছে।
তিতুমীর কলেজে হিসাবরক্ষক পদে ৫ লাখ টাকা নিয়েও এখনো নিয়োগ না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পাচ্ছেন না। এমনকি টাকা ফেরতও দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অতীতে একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন। ২০০৮ সালে ঢাকার বাইরে বদলি, ২০০৯-১০ সালে শিক্ষক বদলিতে দুর্নীতি, এবং ২০১৪ সালে ফাহিমা খাতুন ডিজি থাকাকালে বিভাগীয় মামলাও হয়। এমনকি এমপিও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৮ সালে ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) তদন্ত করে কুমিল্লা অঞ্চলে তাকে সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করে। দুদক থেকেও তদন্তের সুপারিশ করা হয়, তবে আজও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বর্তমানে মাউশির পরিচালক (মনিটরিং)-এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতায় তদন্তের গতি অনেক ধীর।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ