ঢাকা , রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ রাজশাহীর সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিলেন ঠিকাদাররা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুফাঁদ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৬৪ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৩৩ হাসপাতালে ৫০ জন পল্লী বিদ্যুতে মাঠ পর্যায়ে অস্থিরতা বাড়ছে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে : আসক শিক্ষায় ব্যয়, হিমশিম খাচ্ছে পরিবার নাঙ্গলকোটে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ ১৫ আহত ১০ বন্ধের পথে লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ডেমরায় চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে তরুণ নিহত, গ্রেফতার ১ বরিশালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ দোকান পুড়ে ছাই বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত একজনের মরদেহ ভারতের হাসপাতালে আমতলীতে জুলাই পূর্ণ জাগরণ সমাজ গঠনে সেবা মেলা ও লাখো কন্ঠে শপথ পাঠ উদযাপিত স্বাগত জানাতে শাহজালালে ২ জনের বেশি যেতে পারবে না দেশজুড়ে অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ১৬২০ নির্বাচন যত দেরি হবে সরকার নানান প্রশ্নের মুখে পড়বে-গয়েশ্বর আ’লীগের কার্যালয় ‘ফ্যাসিজম ও গণহত্যা ইনস্টিটিউট’ ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাগরে ৫ দিন ১৪ জেলে উদ্ধার

শিক্ষায় ব্যয়, হিমশিম খাচ্ছে পরিবার

  • আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০৩:০০:৪২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০৩:০০:৪২ অপরাহ্ন
শিক্ষায় ব্যয়, হিমশিম খাচ্ছে পরিবার
* রাজধানীতে বেসরকারি স্কুলে ব্যয় শতগুণ বেশি
* বেসরকারি ও ইংরেজি মাধ্যমে ঝুঁকছেন অভিভাবকরা
* রাজধানীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৩৪১টি


দিন যত যাচ্ছে, নামী-দামী স্কুল ও কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বাড়ছে শিক্ষা ব্যয়। এতে নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় ইতোমধ্যে প্রাচ্যের নগরী হিসেবে খ্যাত ঢাকার বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে ব্যয় শতগুণ বেড়েছে। তবে শত কষ্টের মাঝেও সন্তানদের ভবিৎষতের কথা চিন্তা করে বেসরকারি ও ইংরেজি মাধ্যমে বেশি ঝুঁকছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, যদিও রাজধানীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৩৪১টি। এসব বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান তেমন ভালো না হওয়ায় আজকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রতি ঝুঁকছেন অভিভাবকরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, বর্তমানে ১২৮ পৃষ্ঠার একটি খাতার দাম ৫০ টাকা। মানভেদে এই খাতা সর্বোচ্চ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ৪/৫ বছর আগেও সেইখাতা ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া যেত। একইভাবে বেড়েছে ২০০ পৃষ্ঠার খাতার দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮০-৯০ টাকা। ৩০০ পৃষ্ঠার খাতা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, আগে ছিল ৮০ টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২০-২১ সালেও প্রতি দিস্তা কাগজের দাম ছিল ১৬ টাকা, এখন তা ৩৫ টাকা। কয়েক বছর ধরেই কাগজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বই, খাতা ও ব্যবহারিক খাতার মতো কাগজনির্ভর শিক্ষা উপকরণে। গত পাঁচ বছরে এসব শিক্ষা উপকরণের দাম গড়ে বেড়েছে প্রায় শতভাগ। কথা হয় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার লাকি বুকস অ্যান্ড স্টেশনারির জ্যেষ্ঠ বিক্রয়কর্মী মাহবুব এর সঙ্গে। তিনি বলেন, খাতার জন্য সবচেয়ে বেশি চলে ‘৫৫ গ্রাম’ (কাগজের ধরন) কাগজ। ২০২০ সালে প্রতি রিম কাগজ ১ হাজার ২০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে এর দাম ২ হাজার ১০০ টাকার আশপাশে থাকে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বইয়ের দামও। ২০০ টাকা দামের স্কুলের বইয়ের মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি। একই অবস্থা রাজধানীর সুনামখ্যাত স্কুল এণ্ড কলেজ সামসুল হক খানের আশপাশে গড়ে উঠা স্টেশনারিগুলোর। যাত্রাবাড়ির দনিয়া-মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজ, খিলগাঁও ও নীলক্ষেত, কচুক্ষেত, মিরপুর ১০ ও নীলক্ষেত এলাকার বেশ কিছু দোকান ঘুরে জানা গেল, বাজারে চীন থেকে আমদানি করা কলম, পেনসিল বক্স, প্লাস্টিকের ফাইল ইত্যাদি স্টেশনারি পণ্যের চাহিদা বেশি। তবে আমদানিকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় এগুলোর দাম সেভাবে বাড়েনি। মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি। শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বেড়েছে স্কুলের বেতন (টিউশন ফি), প্রাইভেট পড়ানোর খরচও। অভিভাবকেরা বলছেন, এসব খরচ বাড়ার তুলনায় তাদের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই সন্তানের শিক্ষার খরচ মিটিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি নামকরা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে মেয়েটি। তার বেতন ১ হাজার ৩০০ টাকা, টিউশন শিক্ষক নেন ৫ হাজার টাকা। বছরে দুবার কিনতে হয় ১৪টি খাতার সেট। যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে এই শিশুর জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিভাবক বলেন, সন্তানের মানসম্মত পড়ালেখা নিশ্চিতে কষ্ট হলেও ব্যয় করতেই হয়। উপায় তো নেই। ভালো স্কুলে খরচ এমনই। তবে শিক্ষা ব্যয় কমলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে আর্থিক চাপ কিছুটা কমত। এই অভিভাবকের ছোট ছেলে নার্সারিতে পড়ে। দুই ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ মাসে ১৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। অথচ একই শহরের আরেক অভিভাবক মো. বাবুলের মাসিক আয় এর চেয়ে কম। মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন তিনি। তার ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয় মাসে। এই টাকাতেই সংসার চালাতে হয়। বাসাভাড়া, খাবার, ওষুধসহ সব খরচ মিটিয়ে সন্তানের পড়ালেখার জন্য আলাদা টাকা বের করা কঠিন। তাই সন্তানকে নামী স্কুলে পড়ানোর সক্ষমতা নেই এই বাবার। প্রশ্ন ওঠে, মহানগরগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব কি না? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এমন অভিযোগও আছে।
সুবর্ণ, হেড ইন্টারন্যাশনাল ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্লে থেকে বর্তমানে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত একই স্কুলে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনা বাবদ তার বার্ষিক স্কুলের খরচ লক্ষাধিক টাকা। তার বাবা একজন কলেজের অধ্যাপক। তিনি বলেন, ছেলেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পড়াতে চাই। এ জন্য বাংলা মাধ্যমে পড়াইনি। এছাড়া বাংলা মাধ্যমের পড়াশোনা দিয়ে বিদেশ যাওয়া কঠিন হয়। শুধু তিনিই নয়, এটি প্রায় পুরো রাজধানীবাসী অভিভাবকদের কথা। সবাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাদ দিয়ে প্রাইভেট বিভিন্ন স্কুলে পড়াচ্ছেন সন্তানদের। তবে অভিভাবকরা জানান, সরকারি স্কুলের পরিবেশ ও অবকাঠামো ভালো নয়। এছাড়া শিক্ষার মান নিয়ে যথেষ্ট নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি ও ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনা অনেক আপডেট তাই সেদিক ঝুঁকছেন অভিভাবকরা।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি সন্তানের প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ধনী, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকরাও প্রাথমিক শিক্ষায় বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করছেন। সেক্ষেত্রে ধনী অভিভাবকদের জন্যও বিষয়টি কষ্টকর না হলেও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠছে। আর সর্বশেষ যাদের সামর্থ্য হচ্ছে না তারাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৩। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার ৬০৩ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে ১৩ লাখ ১০ হাজার শিক্ষার্থী ছিল এই জেলায়, যার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় অর্ধেকের বেশি। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে ৩৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সরজমিনে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিদ্যালয়ই জরাজীর্ণ ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নেই কোনো খেলার মাঠ। এমনকি অনেক বিদ্যালয়ের জমিও বেদখল হয়ে গেছে।
শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব বিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করছে, তাদের প্রায় সবাই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ব্যানবেইসের ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে ইংরেজি মিডিয়ামে ঢাকায় শুধু ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। সন্তানদের ছোট অবস্থায় যত্নের প্রয়োজন বেশি। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেভাবে শিক্ষার্থীদের যত্ন নেওয়া হয় না। এতে ছোট বেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ব্যাপারে আনন্দ পায় না এবং শিখন ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে তারা অযত্নের প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পাঠাতে চায় না। ইংরেজি মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য বছরে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। এছাড়া স্কুল ভেদে এই খরচ কয়েক লাখ টাকাও হয়। এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া ভালো মানের প্রাইভেট স্কুলের ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতাও রয়েছে। উচ্চবিত্ত অভিভাবকদের কাছে সন্তানের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা এখন ‘সামাজিক মর্যাদার’ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান শিক্ষাবিদরা। সুবর্ণের বাবা অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি বাচ্চার উচ্চ শিক্ষা ও ভবিষ্যতের চিন্তা করে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করিয়েছি। বাংলা মাধ্যমের স্কুল ও পড়াশোনার অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। বাংলা মাধ্যমে পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সিলেবাসের স্কুলে পড়ালে তার জন্য বিদেশ যাওয়া সহজ হবে। তিনি বলেন, ইংরেজি মাধ্যমে খরচ কিছুটা বেশি। কিন্তু বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সেদিক খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। আর বাংলা মাধ্যমের সিলেবাসের চেয়ে ইংরেজি মাধ্যমের সিলেবাস অনেক ভালো। একই ধরনের কথা বলেন আরেকজন অভিভাবক তাসলিমা বেগম। তার মেয়েকেও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। উচ্চবিত্তরা অনেকে মনে করেন ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানদের পড়াশোনা করানো সামাজিক মর্যাদার মতো। তাই এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়ছে। আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের প্রাইভেট বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। তারা মনে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট স্কুলে ভালো পড়াশোনা হয়। তাই এই ধারণা ভাঙার জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ, অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তারপর শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তিতে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করা যাবে। এছাড়া নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে  ৩৪১টি : রাজধানীতে মাত্র ৩৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুলে শিক্ষার গুণগত মান হলো সবচেয়ে বড় সংকট। এছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে খুব বেশি জবাবদিহিতার জায়গা না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার মান প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। মিরপুর-১১ এর আনন্দ নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়া উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৫শ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক আছে মাত্র ৭ জন। আমরা শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার আবেদন করেছি। তবে রাজধানীর অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের ছোট অবস্থায় যত্নের প্রয়োজন বেশি। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেভাবে শিক্ষার্থীদের যত্ন নেওয়া হয় না। এতে ছোট বেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ব্যাপারে আনন্দ পায় না এবং শিখন ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে তারা অযত্নের প্রতিষ্ঠানে শিশুদের পাঠাতে চায় না। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় তৈরিসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ করছি। আশা করি ঢাকার মধ্যে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের প্রাইভেট বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। তারা মনে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট স্কুলে ভালো পড়াশোনা হয়। তাই এই ধারণা ভাঙার জন্য কাজ করতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ, অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তারপর শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তিতে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করা যাবে। এছাড়া নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় তৈরিসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ করছি। আশা করি ঢাকার মধ্যে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ বেগম রাজিয়া হোসাইন বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বেতন-ভাতা বেড়েছে সরকারি নির্দেশনায়। স্কুলগুলোর ইচ্ছেমতো ফি বাড়ানো ঠেকাতে সৎ উদ্দেশ্যেই সরকার হয়তো এটা করেছে। কিন্তু একাধিক সন্তান থাকলে নিম্ন আয়ের কতজন অভিভাবক এই খরচ মেটাতে পারবেন? তিনি বলেন, উপবৃত্তি, মিড ডে মিল ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে, সেই অনুপাতে উপবৃত্তি বাড়েনি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তদারকি তার চোখে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার পেছনে পরিবারের এত বেশি ব্যয় সংগত নয়। শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য